সমুদ্র বা মরুভূমির বালি ব্যবহার করে কি জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হয় না
- আপডেট সময় : ১২:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে
আপনাদের মনের মধ্যে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে সমুদ্র বা মরুভূমিতে এত এত বালি কিন্তু সেগুলোর ব্যবহার কেন এত কম। বাড়ি ঘর নির্মাণের অত্যাবশ্যকীয় দুটি উপাদান হচ্ছে বালু এবং সিমেন্ট। বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি সিমেন্ট উৎপাদন করলেও বালু সংগ্রহ করতে হয় নদী-নালা কিংবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
আমরা জানি বালুন দুটি অন্যতম উৎস হচ্ছে সমুদ্র এবং মরুভূমি। এই দুইটি স্থানে আর যাই হোক বালুর কোন অভাব নেই। কিন্তু বিশ্বের উন্নত উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার হলেও এখন পর্যন্ত এই দুই জায়গার বালু ব্যবহার করে বাসা বাড়ি নির্মাণ করতে দেখা যায়নি। আজকে সেই রহস্য আমরা জানবো।
পাথর কিংবা ইটের গাঁথুনি দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। অনেক বেশি শক্ত এবং মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয় বালু এবং সিমেন্টের মিশ্রণ। এই মিশ্রণের মধ্যে রয়েছে আবার নানারকম হিসেব-নিকেশ। একজন দক্ষ প্রকৌশলী নির্ধারণ করে থাকে কতটুকু বালু আর কতটুকু সিমেন্ট মিশ্রিত করলে সেটি শক্ত একটি কংক্রিটে পরিণত হবে।
আমাদের দেশে বাসা বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয় নদীর বালু। কখনোই সমুদ্র কিংবা মরুভূমির বালু ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এখানে তো বালুর কোন শেষ নেই। সেগুলো কেন রাস্তাঘাট, বিল্ডিং ইত্যাদি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয় না।
বাসা বাড়ি নির্মাণে সমুদ্র কিংবা মরুভূমির বালু ব্যবহার করা হয় না কেন
যেকোনো কনস্ট্রাকশনের কাজে বালু ব্যবহার করার আগে সেটি যাচাই বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তার বৈশিষ্ট্য। আমাদের প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের বালু পাওয়া যায়। যাদেরকে আমরা মাঝারি, বড় এবং মিহি সাইজে ভাগ করে থাকি।
এ সকল বালু কণার আকারের উপরে ভিত্তি করে স্থায়িত্ব এবং ঘনত্বের বিশাল সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে কোন মসৃণ এবং গোলাকার বালুকণার চাইতে একটি অমসৃণ কিংবা কৌনিক বালি বেশি শক্তিশালী।
তাই নির্মাণ কাজে এগুলো ব্যবহার করার আগে ব্যাপক যাচাই-বাছাই এবং হিসাব করা হয়। হিসেবে মরুভূমির বালু খুবই মসৃণ এবং সূক্ষ্ম হয়ে থাকে। এছাড়াও এদের আকৃতি হয় গোলাকার।
আর এসকল গোলাকার বস্তুর রাসায়নিক বন্ধনে খুব বেশি শক্তিশালী হয় না। এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিলে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
আপনি আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছেন নায়ক নায়িকারা যখন মরুভূমিতে শুয়ে তারপর উঠে দাঁড়ায় তখন গা থেকে সাথে সাথে সব বালি নেমে যায়। অর্থাৎ গায়ের কাপড়ের সাথে এগুলো খুব সহজে আটকে যায় না। এর কারণ হচ্ছে মসৃণতা এবং গোলাকার আকৃতি।
ঠিক তেমনিভাবে এই ধরনের মরুভূমির বালু ব্যবহার করে যদি বাসা বাড়ি তৈরি করা হয় তাহলে সেই কংক্রিট খুব বেশি শক্ত হবে না। একে অপরকে শক্তভাবে আঁকড়ে রাখার জন্য বালুর কণা গুলোকে অবশ্যই কৌণিক আকৃতির হতে হবে।
বাসা বাড়িতে সমুদ্রের বালু ব্যবহার করা হয় না কেন?
মরুভূমির মতো সমুদ্রের বালুতেও এই ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি যদি সমুদ্র সৈকতে গিয়ে থাকেন তাহলে এ ব্যাপারটি খেয়াল করবেন। সাধারণ নদীর যে সকল বালি উত্তোলন করা হয় সেগুলো অনেকটাই ধারালো প্রকৃতির হয়। যার কারণে সিমেন্টের সাথে খুব সহজেই মিশতে পারে এবং শক্ত কংক্রিট তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও আরো একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে সমুদ্রের বালিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে। এটি ব্যবহার করলে রড অর্থাৎ লোহায় খুব সহজেই মরিচা ধরে যাবে এবং অল্প কিছুদিন পরেই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এটা ব্যবহার করলে কাঠামো কখনোই টেকসই হবে না।
আমাদের শেষ কথা
কেউ কেউ তার সারা জীবনের সঞ্চয় ইনভেস্ট করে একটি সুন্দর বাড়ির পেছনে। সরকারি খরচে নির্মাণ করা হয় বড় বড় সড়ক এবং বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান। তাই এই ধরনের কনস্ট্রাকশনের কাজের সবচাইতে বেশি মনোযোগ দিতে হয় এর টেকসইতার দিকে। যার কারণে বাড়ি ঘর নির্মাণে সমুদ্র কিংবা মরুভূমির বালু ব্যবহার করা হয় না। কারণ এই দুটি অত্যন্ত লবণাক্ত এবং ক্ষারীয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স থেকে ইনকামে পরিবর্তন, বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।